পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শিক্ষা ও সচেতনতার দিক থেকে রাজ্যের মধ্যে এগিয়ে থাকলেও, নাবালিকা বিবাহের হারে শীর্ষস্থানে রয়েছে। এই সামাজিক ব্যাধি রোধে এবার আরও একধাপ এগোল জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রায় ৭৫০ টি স্কুলের …
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শিক্ষা ও সচেতনতার দিক থেকে রাজ্যের মধ্যে এগিয়ে থাকলেও, নাবালিকা বিবাহের হারে শীর্ষস্থানে রয়েছে। এই সামাজিক ব্যাধি রোধে এবার আরও একধাপ এগোল জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রায় ৭৫০ টি স্কুলের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক এবং এসডিও ও বিডিও দের নিয়ে অনুষ্ঠিত হল এক ভার্চুয়াল সচেতনতা বৈঠক।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী, জেলা পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অনির্বাণ কোলে, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) নেহা বন্দ্যোপাধ্যায়, পূর্ব মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিভাস রায়, জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ অপর্ণা ভট্টাচার্য, রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায় চৌধুরী সহ দপ্তরের অন্যান্য আধিকারিকেরা।
জেলা প্রশাসনিক ভবনে বসে তমলুকের কাকগেছিয়া সত্যনারায়ণ হাই স্কুল সহ কয়েকটি স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা সরাসরি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বাকি স্কুলগুলি যুক্ত হয় ভার্চুয়াল মাধ্যমে। মূলত অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে এই সচেতনতা বার্তা দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, মাস কয়েক আগে ময়নায় গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অন্নপূর্ণা এলাকায় একটি লজে নাবালিকা বিয়ের জন্য প্রস্তুতি চলছিল বিয়ের ঠিক আগে পৌঁছে বিয়ে আটকে দিয়েছিল ময়নার বিডিও ও ময়না থানার পুলিশেরা। পরিবারের বাবা মা লিখিত দিয়েছিল তারা আর এই ভুল কাজ করবেন না। পাশাপাশি লজের মালিকও লিখে দিয়েছিল বয়সের প্রমাণপত্র ছাড়া তিনি আর বিয়ের জন্য ভাড়ায় দেবেন না। বারবার সচেতন করার পরেও এভাবেই লুকিয়ে নাবালিকার বিয়ে প্রবণতা এখনো রয়েছে জেলায়। মূলত এই জেলায় ভগবানপুর ১, পটাশপুর, ময়না, এগরা এই সমস্ত এলাকাগুলিতে বেশি পরিমাণে নাবালিকা বিয়ের হওয়ার ঘটনা রয়েছে।
বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী বিপ্লব রায় চৌধুরী জানান, শুধুমাত্র কোলাঘাট ব্লকে গত এক বছরে কয়েকশো ছাত্রী স্কুলে আসা বন্ধ করেছে এবং ১৩ বছরের তিনটি নাবালিকা গর্ভবতী হয়েছে—যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, জেলা শিক্ষার দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও নাবালিকা বিয়ের হার আমাদের লজ্জায় ফেলে দেয়। এর থেকে বেরোতে হলে সচেতনতার বিকল্প নেই। স্কুলগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যদি কোনও ছাত্র বা ছাত্রী স্কুলে অনুপস্থিত থাকে, তাহলে খোঁজ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে।
সচেতনতা শিবিরে অংশগ্রহণকারী দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সহেলি ঘোষ বলেন, এর আগেও আমাদের স্কুলে অনেকবার নাবালিকা বিয়ে রোধে সচেতনতা শিবির হয়েছে। কিন্তু আমরা ভয় পেতাম নাবালিকা বিয়ে আটকে দিলে যদি আমাদের কোন ক্ষতি হয় কিন্তু আজকে শিবিরে এসে বুঝলাম এটা আমাদের জেলার মেয়েদের কত বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই আজকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একা না পারলে সমস্ত বান্ধবীরা একত্রে হয়ে আমরা বিয়ে বন্ধ করবই।
শুধু নাবালিকা বিবাহই নয়, পরিবেশ দূষণ এবং ডিজে বক্স বাজানো, ট্রাফিক আইন নিয়েও বার্তা দেন আধিকারিকরা। পড়ুয়াদের সামাজিক মূল্যবোধ শেখার ওপরও জোর দেওয়া হয়। প্লাস্টিক ব্যবহারে সংযম, স্কুল ও বাড়ির চত্বর পরিষ্কার রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় শব্দদূষণ বন্ধে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এদিন বৈঠকের শেষে সমস্ত স্কুলে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের দিয়ে নাবালিকা বিয়ে রোধে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়।

No comments